পৃথীবিতে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মানুষের খাদ্যের চাহিদা। বিশ্বে ১৯৯০ সালে জনসংখ্যা চিল ৫৩০ কোটি যা বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৭৫০ কোটিতে উপনিত হয়েছে। এভাবে জন সংখ্যা বাড়তে থাকলে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে আগামি ২০৩০ সালে প্রায় ৮৬০ কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করতে হবে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ২.৯৬ লক্ষ নতুন শিশু জন্ম গ্রহণ করে এবং ১.২২ লক্ষ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নানাবিধ কারণে মারা যায়। এ হিসাবে প্রতি দিন গড়ে ১.৭৪ লক্ষ মানুষ। অর্থাৎা বছরে ৪.৯৭ কোটি নতুন জনসংখ্যা যুক্ত হয় বিদ্যমান জনসমুষ্টির সাথে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতির দেশ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপটাও এখানে বেশি। মানুষ জন্ম গ্রহণের পরে তাঁর বেচে থাকার জন্য প্রথম প্রয়োজন হয় খাদ্যের; এর পরে বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির। মানুষের খাদ্য উপকরণের মধ্যে মাছের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস্য মাছ। মাছ তুলনামূলক স্বল্প মুল্যে পাওয়া যায়, এতে আছে সহজ পাচ্চ, উন্নতগুণগতমানের আমিষ। মানবদেহে যার কোন ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই। এতে আরো রয়েছে বিভিন্ন প্রকার দরকারি ভিটামিন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজলবণ এবং অত্যাবশ্যকিয় তৈল উপাদান (Essential fatty acids)। মাছ বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর কোটি কোটি জনগণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০% এর অধিক যোগান আসে মাছ থেকে। এদেশগুলোতে দরিদ্র জনস্যাখ্যার বসবাস বেশি, তাঁরা পুষ্টিস্বল্পতা (Malnourished)সমস্যায় জরজরিত এবং তাদের অধিক মূল্যের বিকল্প পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য (Alternative nutrient-rich foods) উপকরণ যেমন মাংশ, দুধ, ডিম বা ফল-মূল কেনার যথেষ্ট সামর্থ নাই। বিশ্বের আগামী দিনের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে মাছের বিশেষ ভূমিকা থাকবে কারণ মাছের খাদ্য মাংশে রুপান্তরের বিশেষ যোগ্যতা রয়েছে (Fish are super efficient at turning feed into biomass), বিশেষ করে অন্যন্য প্রাণিজ আমিষ সরবরাহকারী প্রাণী গরু-ছাগল, হাঁস-মূরগী ও শুকরে তুলনাই (চার্ট ১)। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের খাদ্য রুপান্তর হার সর্ব নি¤œ হওয়ায় সমপরিমাণ প্রাণিজ আমিষের উৎপাদনে সবচেয়ে কম খাদ্য উপকরণ ব্যবহার মাছই স্থায়িত্বশীল (Sustainable) উৎপাদন নিশ্চিত করবে।